Skip to main content

আনন্দবাণী : শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজীর বাণী

    শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার)

সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি (১৯২১ – ১৯৯০) ছিলেন একজন ধর্মগুরু (তারক ব্রহ্ম), দার্শনিক, নব্যমানবতাবাদী, যোগী, গ্রন্থকার, সামাজিক বিপ্লবী, কবি, সঙ্গীতকার, ভাষাবিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, পরিবেশবিদ ইত্যাদি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত  আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ  আজ বিশ্বের ১৮০-টিরও বেশি দেশে সর্বাত্মক সেবামূলক কার্যাবলী চালিয়ে যাচ্ছে। *

  1. এক নিরাকার, অনাদি, অনন্ত পরম ব্রহ্মই জীবের একমাত্র আরাধ্য– তিনিই জগৎগুরু, তিনিই আনন্দমূর্ত্তিজীর নাম-রূপের মাধ্যমে আমাদের কাছে ব্রহ্মবিদ্যা প্রকাশ করেছেন। তাঁর মাহাত্ম্য জীবকে বুঝিয়ে দিতেই হবে। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ মার্গে চর্যাচর্য, দ্বিতীয় খন্ড) 
  2. জানুস্পর্শ ও বরাভয় মুদ্রায় আনন্দমূর্ত্তিজী অনন্তকালের জন্য যে শক্তিস্পন্দন সৃষ্টি করে দিয়েছেন তোমরা তার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে তথা জগৎকে সর্বাত্মক কল্যাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাও। ঁওং শান্তিঃ। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ মার্গে চর্যাচর্য, দ্বিতীয় খন্ড) 
  3. কর্মই মানুষকে মহান করে' তোলে। সাধনার দ্বারা, সেবার দ্বারা ও ত্যাগের দ্বারা মহান হও। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন) 
  4. সাধক মাত্রই সৈনিক। দুর্গম পথের কন্টকাঘাতই তার অগ্রগতির প্রতীক। বিশ্বের সামূহিক কল্যাণই তার জয়-তিলক। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন)
  5. জীবন একটি আধ্যাত্মিক সাধনা  আর এই সাধনার ফল পরমপুরুষে সমর্পণ করতে হবে। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন)
  6. নিজেকে জানাই যথার্থ জ্ঞান, নারায়ণ জ্ঞানে জীবের সেবাই যথার্থ কর্ম ও পরমপুরুষকে আনন্দ দেওয়ার ব্রতই যথার্থ ভক্তি।  (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন)
  7. সংগ্রাম জীবনের মূল মন্ত্র। পাপাচার, কপটাচার ও পশুতার বিরুদ্ধে তোমাদের সীমাহীন সংগ্রাম চালিয়ে' যেতে হবে।  (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন)
  8. আদর্শের জন্যে সংগ্রাম করো। আদর্শের সঙ্গে নিজেকে এক করে' ফেলো। আদর্শের জন্যে বেঁচে থাকো। আদর্শের জন্যেই মরণকে বরণ কোরো। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন)
  9. জীবন আদর্শের পরিচায়ক। আদর্শের জন্যে জীবন উৎসর্গ করতে হবে। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন)
  10. মনে রেখো, জগতের প্রতিটি প্রাণীর প্রতি তোমার কর্ত্তব্য আছে, দেয় আছে কিন্তু তোমার প্রতি কারুর কর্ত্তব্য নেই, কারুর কাছ থেকে কোনও পাওনা নেই। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ মার্গে চর্যাচর্য, দ্বিতীয় খন্ড)
  11. কারোর ক্ষতি করার চিন্তা না করে তাকে সংশোধনের নির্দেশনা দাও, তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করো না। সেটা যথোপযুক্ত ভাবনা নয়। সেক্ষেত্রে তোমার ত্রুটিপূর্ণ মানসিকতা তোমারই ধ্বংসের কারণ হবে। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, ত্রয়োদশ খন্ড, ২২৩ নং প্রবচন – বিভিন্ন নৃত্য ও বিদ্যার পথ)
  12. সকল বস্তুরই একটা ভিত্তি থাকা চাই। জীবন দৃঢ়ভিত্তিক না হ'লে তা' সামান্য ঝড়েই ভেঙ্গে' পড়ে। ব্রহ্মভিত্তিই দৃঢ়তম ভিত্তি। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ মার্গে চর্যাচর্য, দ্বিতীয় খন্ড)
  13. বিভিন্ন ধরনের মানবিক শাস্ত্রের চর্চা নিষ্পক্ষ ভাবে করা হোক ও সেই চর্চার ফলশ্রুতিকে নন্দন বিজ্ঞানের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হোক। মানুষ দ্রুত এগিয়ে যাবে। আজ রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সমাজে সমাজে গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে যে হানাহানি, তা অত্যল্প কালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার কারণ নেই। মানুষকে কেবল দৃঢ় পদবিক্ষেপে লক্ষ্যকে সামনে রেখে–সংশ্লেষণাত্মক লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলতে হবে। 'চরৈবেতি চরৈবেতি'–এই হোক আজকের মানুষের মূলমন্ত্র। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, ত্রয়োদশ খন্ড, ২৪১ নং প্রবচন – অণুমানসের শাশ্বত বর্ধমান আয়তক্ষেত্র)
  14. পরমপুরুষ ভক্তকে ভালবাসেন। তাই তিনি ভক্তকে না জানিয়ে গোপনে পাপ হরণ করেন। না জানিয়ে কোন কিছু হরণ করে নিয়ে নেন, তাই তিনি হরি। আর পাপ হরণ করার পর হরি কি থেমেই থাকেন? না। জীবের মন হ'ল অস্তিত্বের সারসত্তা। মনের সারসত্তা হ'ল আত্মা। আর জীবাত্মার সারসত্তা পরমাত্মা। তাই পরমপুরুষ হচ্ছেন সারাৎসার। এই সারাৎসার হরি মানুষের সারসত্তা আত্মাকেও অপহরণ করে নেন। দুধের সারসত্তা যেমন মাখন, অস্তিত্বের সারসত্তা তেমনি আত্মা। এই যে সারাৎসার পরমপুরুষ সারসত্তা আত্মাকে হরণ করেন তিনি অবশ্যই মাখনচোর। তাই ভক্তের কাছে তিনি মাখনচোর। মাখনচোর মানে যিনি মনের রাজা। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, গন্ধ পরিক্রমা, ২০১৫ তৃতীয় মুদ্রাঙ্কন অনুসারে ১২৭ – ১২৮ নং পৃষ্ঠা)
  15. কোন নীতি, কোন আদর্শকে রূপ দিতে গেলে একটা ৰলিষ্ঠতার প্রয়োজন। যে-সে তা পারে না; বিশেষ করে এই কাজে যাকে নেতৃত্ব দিতে হয়, যাকে পুরোধা পুরুষ হতে হয় বা অগ্রপুরুষ হতে হয়, তার মধ্যে কঠোরতা থাকা প্রয়োজন। লক্ষ্যটিকে সব অবস্থায় ঠিক রাখব ও লক্ষ্যটিকে ঠিক রেখে চলতে থাকব, কারও ৰাধা মানব না, কারও মানা মানব না ও চলতে শুরু করে থামব না, থমকে দাঁড়াব না। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, নমঃ শিবায় শান্তায়, জানুয়ারী, ২০১৯ সপ্তম মুদ্রাঙ্কন অনুসারে ৯ নং পৃষ্ঠা)
  16. গৃহী গার্হস্থ্য ধর্মের মধ্যে থেকে ভাগবত ধর্মের অনুশীলন করবে ও ত্রিতাপদগ্ধ জীবের সেবা করে যাবে। আর সন্ন্যাসী গার্হস্থ্য ধর্মের ৰাইরে থেকে ভাগবত ধর্মের অনুশীলন করবে আর মানুষের সকল রকম ক্লেশে শান্তি তথা সংবৃদ্ধির প্রলেপ লাগিয়ে যাবে। এইটাই ধর্মোচিত পথ। এইটাই পরমপুরুষের ঈপ্সিত। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, নমঃ শিবায় শান্তায়, জানুয়ারী, ২০১৯ সপ্তম মুদ্রাঙ্কন অনুসারে ১০৭ নং পৃষ্ঠা)
  17. সৎ ব্যষ্টিরা নৈতিকতায় যত বেশী দৃঢ় হবে, পাপশক্তিরা তাদের বিরুদ্ধে তত বেশী সক্রিয় হয়ে উঠবে। তাই বিশ্বের সমস্ত নীতিবাদীর উচিত সঙ্ঘবদ্ধভাবেই পাপশক্তির সম্মুখীন হওয়া। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন) 
  18. আজকের সাধক কাল সিদ্ধিলাভ করবে। সাধনা করতে করতে যখন দূরত্ব কমে যাবে তখন সে পরমপুরুষের একেবারে নিকটে এসে যাবে, আর একদিন পরমপুরুষের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে যাবে। যেমন নদী চলতে চলতে একদিন সমুদ্রে মিশে যায়, আর মিশে যাবার পর নদী বলতে পারে না যে এই জল ওই নদীরই ছিল। দু'য়ে মিলে এক হয়ে যায়। যখন মনুষ্য শরীর পেয়েছ তো তুমি ভাগ্যবান। তবে ভাগ্যবান মানুষ এই সৌভাগ্যের পুরো উপযোগ কেন করবে না ? যে করে না সে মূঢ়, নির্বোধ, বোকা। তোমরা বোকা হবে না, সরল হও, উদার হও, কিন্তু বোকা হয়ো না। নিজেকে ঠকিও না। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বাত্রিংশ খন্ড, প্রবচন–নিজেকে ঠকিও না) 
  19. সমগ্র "আমি"-বোধকে বলে গুহা। তিনি গুহায়িত তত্ত্ব। তিনি তোমার " আমি"-বোধের মধ্যেই আছেন কিন্তু তুমি তাঁর অস্তিত্ব অনুভব করতে পার না। তাঁর অস্তিত্ব অনুভব করতে গেলে সাধনা করতে হবে, কেননা তিনি তোমার "আমি"-বোধের মধ্যে লুকিয়ে আছেন। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, চতুস্ত্রিংশ খন্ড, প্রবচন – তিলের মধ্যে তেল আছে) 
  20. যে সব তত্ত্ব বা দর্শন মানুষের প্রতি মানুষকে সন্দেহ করতে শেখায়, মানুষকে শত্রু ৰলে ভাবতে শেখায়, সেই সকল দর্শন বা তত্ত্ব অতীতে পৃথিবীর অনেক ক্ষতি করেছে, যথাকালে সংযত ও সংহত না করলে ভবিষ্যতেও অনেক ক্ষতি করবে।  (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, নমঃ শিবায় শান্তায়, জানুয়ারী, ২০১৯ সপ্তম মুদ্রাঙ্কন অনুসারে ১০৪ নং পৃষ্ঠা)
  21. মনের বিকাশ যেখানে স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা বা কুসংস্কার দ্বারা রুদ্ধগতি হয়নি তারই নাম মুক্তি। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ মার্গে চর্যাচর্য, দ্বিতীয় খন্ড) 
  22. মানব জীবন অল্পমেয়াদী। সাধনা সম্পর্কিত শিক্ষা তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ করে' নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ মার্গে চর্যাচর্য, দ্বিতীয় খন্ড) 
  23. বহুকালের অবহেলিত নর-নারায়ণ আজ জেগে' উঠেছে। তার এই সুপ্তিভঙ্গ মানব-ইতিহাসে এক নূতন অধ্যায়ের সূচনা করবে। সেই অনাগত ঐতিহ্যের তোমরাই প্রথম বার্তাবহ। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দবাণী সংকলন) 
  24. মানুষ, মনে রেখো পরমপুরুষ তোমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কোন অবস্থাতেই তুমি একলা নও। পরমপুরুষ কখনও তোমার দুঃখ-বিপদে উদাসীন থাকতে পারেন না, তিনি সব সময় তোমার ব্যথা-বেদনা অনুভব করেন। তাঁর নির্দেশমত কাজ করে যাও, আর তাতেই তুমি যাবতীয় কষ্ট-যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পাবে। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, প্রথম খন্ড, ৫ নং প্রবচন –  পরমপুরুষ সর্বাশ্রয়)
  25. ভক্তির সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাও....ভক্তির পথেই এগিয়ে চলো। মনে রেখো, যেখানে ভক্তি সেখানেই পরমাত্মা। যারা জ্ঞানী, যারা তার্কিক, তাদের পক্ষে ধর্মের পথ হ'ল ক্ষুরধার তুল্য কিন্তু যারা সাধক, যারা ভক্ত তাদের পক্ষে সে পথ কুসুমাস্তীর্ণ। তাই ভক্তির দ্বারাই যখন পরমপুরুষ লভ্য তখন ভক্তিমান সাধক পরমপুরুষকে পাবেই। তোমরা সাধক, তোমরা ভক্তির পথে চলছ, জয় তোমাদের হবেই। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, প্রথম খন্ড, ২ নং প্রবচন – "উত্তিষ্ঠত জাগ্রত...") 
  26. ভক্ত সব সময় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করে। জ্ঞানী করে কী? –না, ধর্মশাস্ত্রের বা তর্কশাস্ত্রের হাজার সমস্যা নিয়ে অযথা মাথা ঘামায়। কিন্তু ভক্ত ধর্মশাস্ত্রের সারাংশ আত্মসাৎ করে। ভক্ত জেনে বুঝে পরমপুরুষের শরণ নেয়। যদি পরমপুরুষকে ধরি একটা জাহাজ....একটা প্রকান্ড বড় জাহাজ, ভক্ত করে কী? –না, সে সেই প্রকান্ড জাহাজরূপী পরমপুরুষে চেপে বসে ও নিশ্চিন্ত নিরুদ্বেগে এই ভবসমুদ্র পার হয়ে যায়। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, প্রথম খন্ড, ৮ নং প্রবচন – "মায়ামেতাং তরন্তি তে")
  27. বিরাট সর্বব্যাপক সত্তার নামে মূর্ত্তিপূজা কখনই বাঞ্ছনীয় নয়। মূর্ত্তিটা একটা সীমিত জিনিস। যে মুখে বলছো ব্রহ্ম সর্বব্যাপক, সেই মুখেই যদি মূর্ত্তিপূজার সমর্থন কর, তবে তোমার উক্তি স্ব-বিরোধী হচ্ছে না কি? মূর্ত্তিটা যদি ব্রহ্ম হয়, তবে সেটা যে জলচৌকির ওপরে রয়েছে, সেই জলচৌকিটা নিশ্চয়ই ব্রহ্মের বাইরে। এ কেমন ধারা কথা হোল! (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, তন্ত্রই সাধনা সাধনাই তন্ত্র, প্রবচন – দ্বিতীয় অধ্যায় 'সাধনা ও মধুবিদ্যা')
  28. শিবের ধর্ম পরমপুরুষকে প্রাপ্তির ধর্ম। তাই তাতে বহিরঙ্গিক জিনিস নেই বললেই চলে। যজ্ঞে ঘৃতাহুতি দিয়ে, পশুর রক্তের আহুতি দিয়ে তুচ্ছ আত্মতৃপ্তির পথ তা নয়। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, নমঃ শিবায় শান্তায়, জানুয়ারী, ২০১৯ সপ্তম মুদ্রাঙ্কন অনুসারে ১৩ নং পৃষ্ঠা)
  29. মনে রেখো, অতি স্বল্পকালের জন্যেই তুমি এই পৃথিবীতে এসেছ। তাই তোমার সময় ও সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করো, মনের মধ্যে যথার্থ সেবার মনোভাব পোষণ করে জগতের সেবা করে যাও; জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সকল স্তরে সর্বাত্মক সেবার কাজ চালিয়ে যাও। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, প্রথম খন্ড, ৬ নং প্রবচন – আধ্যাত্মিক প্রগতির তিনটি সোপান) 
  30. পৃথিবীর সব মানুষ বি আই পি। কেন? পরমপুরুষ তার পিতা, সেইজন্যে কেউ ছোট হতে পারে না। সবাই সমান উচ্চ কুলের, কারণ পিতা সবার এক। যে জাতপাত মানে সে পরমপুরুষকে মানে না। কোন এক পিতার সন্তান পাঁচ'শ জাতের হতে পারে না। যে পরমপুরুষকে মানে, সে জাতপাতের ভেদাভেদ মানে না।  (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বাত্রিংশ খন্ড, প্রবচন – পরমপুরুষ তোমার সঙ্গে আছেন) 
  31. পরমপুরুষ সবসময় তোমার সঙ্গে আছেন। তোমার মত শক্তিশালী মানুষ পৃথিবীতে আর কে আছে? কোন অবস্থাতেই তোমার বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আর সব সময় খেয়াল রাখবে যে পরমপুরুষ তোমার সঙ্গে আছেন, আর এই কথা মনে রাখতে হবে, যা কিছু পার্থিব কাজ তুমি করবে, জয় তোমার হবে। এইজন্যে আমি বলি তোমাদের সবার জয় হবেই। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বাত্রিংশ খন্ড, প্রবচন – পরমপুরুষ তোমার সঙ্গে আছেন) 
  32. ব্রহ্মৈব গুরুরেকঃ নাপরঃ। (ভাবার্থ – এক মাত্র ব্রহ্মই গুরু। তিনিই বিভিন্ন আধারের মাধ্যমে জীবকে মুক্তিপণের সন্ধান দিয়ে থাকেন। ব্রহ্ম ব্যতীত আর কেউই গুরু পদবাচ্য নন।) (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দসূত্রম্)
  33. প্রার্থনার্চনা মাত্রৈব ভ্রমমূলম্। (ভাবার্থ –ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করা বৃথা কারণ যার যা প্রয়োজন তিনি তা দেবেনই, অর্চনা করা খোসামুদি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।) (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দসূত্রম্)
  34. ভক্তির্ভগবদ্ভাবনা ন স্তুতির্নার্চনা। (ভাবার্থ – একনিষ্ঠ ভাবে ভগবানের ভাবনা নেওয়ার নামই ভক্তি। ভগবানের স্তুতি গাওয়া বা বিভিন্ন উপাচারে অর্চনা করার সঙ্গে ভক্তি সম্বন্ধিত নয়। তবে ভক্ত ইচ্ছা করলে তা করতে পারে কিন্তু তা ভক্তি সাধনার অত্যাবশ্যক অঙ্গ নয়।) (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দসূত্রম্)
  35. তোমার মন যে রকমই হোক, ওই মনকে তুমি পরমপুরুষকে এই বলে দিয়ে দাও যে আমি ভাল হই বা মন্দ হই, আমি তোমার। আমাকে গ্রহণ করা, আমাকে উঠিয়ে নিজের কোলে বসানো তোমার কর্তব্য। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বাত্রিংশ খন্ড, প্রবচন – ত্বমিদং গৃহাণ)
  36. তুমি যদি সবকিছু জানতে চাও, তাহলে এক-কে জান। নাহলে তুমি কিছুই জানতে পারবে না।  (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, ত্রয়োত্রিংশ খন্ড, ২৯ নং প্রবচন – লীলা ও ক্রীড়া)
  37. তোমার ভেতরে তাঁর খোঁজ কর, আর খোঁজ কর চরম ঐকান্তিকতার সঙ্গে, পরম নিষ্ঠার সঙ্গে, পরম ভক্তির সঙ্গে। তবেই সেই চিরভাস্বর সত্তা তোমার হৃদাকাশে চরম দ্যুতি নিয়ে ফুটে উঠবেন। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বিতীয় খন্ড, ৪৯ নং প্রবচন – সত্যের পরম নিধান)
  38. একজন সাধক, একজন আধ্যাত্মিক পথ অনুসরণকারীর ঠিক এক সৈনিকের মত হওয়া উচিত। সে সৈনিক, কেননা তার ঈশ্বরপ্রাপ্তির অনুশীলন সংগ্রাম ছাড়া আর কিছুই নয়; সমস্ত অধোগামী প্রবণতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। তাই তোমাকে শৃঙ্খলা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট বিধি মেনে চলতে হবে। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, চতুস্ত্রিংশ খন্ড, ৬ নং প্রবচন – প্রণব)
  39. এই শরীর জনসেবার যন্ত্র, জনসেবার মেশিন। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বাত্রিংশ খন্ড, ১ নং প্রবচন – জীবের পরাগতি)
  40. দোষ হ'ল তোমার নিজের আর তোমার অহঙ্কার-রূপী ছাতাটার। সেজন্যেই তুমি তাঁর অশেষ করুণাধারা থেকে বঞ্চিত থেকে যাও। এর জন্যে পরমপুরুষ দোষী নন। মূল কথা হ'ল, তোমার মাথার ওপর থেকে ওই অহঙ্কার-রূপী ছাতাটা সরিয়ে দাও, দেখবে সঙ্গে সঙ্গে তুমি তাঁর বিশ্বপ্লাবী করুণাধারায় অভিসিঞ্চিত হয়ে যাচ্ছ। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বিতীয় খন্ড, ৩৮ নং প্রবচন – 'গুরুকৃপা হি কেবলম্')
  41. সমাজে প্রধান ব্যষ্টি যেমন আচরণ করেন, জনসাধারণ তেমনই  অনুকরণ ও অনুসরণ করে। মানব সমাজে যে দুর্গতি এসেছে তার কারণ অনেক নয়, মাত্র একটাই। আর সেটা সমাজে নেতাদের দুর্নীতি। নেতাদের বিচারশীলতা কম হলেও জনসাধারণ তাঁদের চিন্তা-ভাবনাকে চোখ বুঁজে মেনে নেয়। তাঁদের বক্তৃতা বা অভিনয় লাখ লাখ ব্যষ্টিকে সম্মোহিত করে রাখে। তাই কোন দেশে বা সমাজে বেশী ক্লেশ ও দারিদ্র্য দেখলে বুঝতে হবে সেই দেশে বা সমাজে নেতার পাপে এমন হয়েছে। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বাত্রিংশ খন্ড, ১৩ নং প্রবচন – আচার্য কথার তাৎপর্য/আচার্যের তাৎপর্য)
  42. তোমরা আমার ছেলে-মেয়েরা, তোমাদের উন্নত মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, আর মানবীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে মহিমান্বিত হয়ে সমাজের সব ব্যাপারেই নেতৃত্ব দিতে হবে। সমাজ তোমার সেবার জন্যে, তোমার ত্যাগের জন্যে তোমাকে মেনে নেবে। শুধু তাই নয়, সকলেই চায় যখন সকলের অতীব প্রয়োজন তখন তারা যেন তোমার সাহায্য, সহায়তা ও নির্দেশনা পায়। আমার ছেলে-মেয়েরা, তোমাদের জানা উচিত যে, আমাদের সমুন্নত আদর্শকে রূপায়িত করার জন্যে আমি সম্পূর্ণভাবে তোমাদের ওপর নির্ভর করি। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, চতুস্ত্রিংশ খন্ড, ১৮ নং প্রবচন – সমাজ তোমার কাছে নির্দেশনা চায়)
  43. কোন পরিস্থিতিতেই ধর্মের বিরুদ্ধে যাবে না। যেকোন পরিস্থিতিতেই ধর্মকে প্রথম স্থান দেবে। আর যে ধর্মকে সঠিক প্রাধান্য দেয়, জয় তার অনিবার্য, কোন অবস্থাতেই তার হার হয় না, হয়নি, হবে না। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, দ্বাত্রিংশ খন্ড, ৭ নং প্রবচন – তদাত্মানং সৃজাম্যহম্)
  44. মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব কর্মে, কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে। মানুষের উচিত মহান কাজ করবার জন্যে পৃথিবীতে দীর্ঘ জীবন বাঁচা। (শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, আনন্দ বচনামৃতম্, ত্রয়োত্রিংশ খন্ড, পরিশিষ্টাংশ প্রবচন – গৌরবময় জীবন অতিবাহিত করো)
  45. যাঁর মধ্যে দর্শন-জ্ঞানের অহঙ্কার নেই, যিনি পরমাত্মাকে নিজের আত্মারূপে ভাবেন ও ভালবাসেন তাঁর মধ্যে তাঁর (পরমাত্মার) ভাব ক্রমশঃ প্রকট থেকে প্রকটতর হতে থাকে, তাঁর মানস-সত্তার সঙ্গে সঙ্গে আত্মদ্যুতিও প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তিনি যেন ঠিক ব্রহ্মভাবটুকু নিয়েই ক্রমশঃ বিকশিত হতে থাকবেন। {শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, সুভাষিত সংগ্রহ  (৭,৮ ও ৯ খন্ড একত্রে), প্রবচন – পরম প্রশ্ন (দুই)}
  46. ব্রহ্ম প্রেমস্বরূপ ও তিনি অসীমিত। তাই ব্রহ্ম প্রেমে যে রত রয়েছে, সে ক্রমশঃ সসীম থেকে অসীমের দিকে এগিয়ে চলবে। {শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, সুভাষিত সংগ্রহ  (৭,৮ ও ৯ খন্ড একত্রে), প্রবচন – পরম প্রশ্ন (দুই)}
  47. পরমাত্মা মানস স্তরের ঊর্ধ্বে। তাই মূর্খ ব্যষ্টি নিজেকে ব্রহ্মজ্ঞ বলে জাহির করবে। মূর্খই বলবে সে ব্রহ্মকে জেনে ফেলেছে। বস্তুতঃ কীটদষ্ট পুষ্প যেমন অর্ঘ্যরূপে ব্যবহার করা চলে না ঠিক তেমনি যে মনে অহমিকা-কীট বাসা বেঁধে রয়েছে সে মন পুরুষোত্তমকে নিবেদন করা যায় না। তাই মনকে সমর্পণ করবার পূর্বে মনের কীট সরিয়ে ফেলবার সাধনা করতে হবে। {শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, সুভাষিত সংগ্রহ  (৭,৮ ও ৯ খন্ড একত্রে), প্রবচন – পরম প্রশ্ন (দুই)}
  48. বিচারকালে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক দুটি ভাবের মধ্যে বোধভূমিতে যে ভাবটির প্রতিষ্ঠা হয়, তাকে বলা হয় সিদ্ধান্ত। ব্রহ্ম ধনাত্মক বা ঋণাত্মক  কোন ভাবই নন। তাই তাঁকে বৌদ্ধিক সিদ্ধান্তরূপে ধরা চলে না।{শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি, সুভাষিত সংগ্রহ  (৭,৮ ও ৯ খন্ড একত্রে), প্রবচন – পরম প্রশ্ন (দুই)}

(এই ওয়েবসাইটে বর্তমানে কাজ চলছে। পরবর্তী সময়ে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজীর লেখা ২৬৪-টি গ্রন্থ থেকেই আরও অজস্র মূল্যবান বাণী সংযোজন করা হবে।)

Comments